মি.বিন-এর অজানা জগৎ
মি. বিন এর নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। মি. বিন নামে খ্যাত মানুষটি সারাবিশ্ব জুড়ে পরিচিত। তার এই মি. বিন নামের আড়ালে প্রায় ঢাকা পড়ে গেছে তার আসল নাম, পরিচয়।
১৯৫৫ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসেল নগরীতে তার জন্ম। তার বাবার নাম এরিক অ্যাটকিনসন। তিনি পেশায় একজন কৃষক ও কোম্পানি পরিচালক ছিলেন।তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট মি. বিনের পিতৃ প্রদত্ত নাম রোয়ান এটকিনসন। অভিনয় করা কিংবা কমেডিয়ান হওয়া কোনোটিই তার লক্ষ্য ছিল না। নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটি ছেড়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে এসে তার পরিচয় ঘটে প্রখ্যাত চিত্রনাট্যকাররিচার্ড কার্টিসের সঙ্গে। দুজনে মিলে অক্সফোর্ড নাট্যশালা গড়ে তোলেন। রিচার্ড কার্টিসের সঙ্গে নাটক লেখাও শুরু করেন। সেইসঙ্গে কমেডি নাটকে অভিনয়। পরবর্তী সময়ে অভিনয় করেন এডেনবার্গ ফ্রিঞ্জ-এ।
১৯৭৮ সালে হ্যাম্পস্টেড থিয়েটারে তার অভিনীত একটি কমেডি নাটক প্রচুর দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ার পর ব্রিটিশ টেলিভিশনে দুটো সিরিজে মূল ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পান রোয়ান এটকিনসন; কিন্তু তিনি এখানে অভিনয় না করে যোগ দেন বিবিসির লোককাহিনী ‘নট দ্য নাইন’ ও ‘ক্লক নিউজ’-এ। সিরিজ দুটি ব্যাপক সাড়া জাগায়। সেইসঙ্গে বেস্ট সেলিং বইয়ের তালিকায়ও এ দুটির নাম ওঠে। তিনি জিতে নেন এমি অ্যাওয়ার্ড ও ব্রিটিশ একাডেমি অ্যাওয়ার্ড। এ ছাড়া এ সিরিজ দুটোর জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে জিতে নেন ব্রিটিশ একাডেমি অ্যাওয়ার্ড। সেইসঙ্গে পরিচিতি পান, ‘বিবিসি পার্সোনালিটি অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে। লন্ডন গ্লোব থিয়েটারে তার শো চলে একেবারে’হাউসফুল’ অবস্থায়। ফের জিতেন ‘সোসাইটি অব ওয়েস্ট অ্যান্ড থিয়েটার অ্যাওয়ার্ড’।
এটি লাভ করেন তিনি ১৯৮০ সালের সেরা কমেডিয়ান হিসেবে। ১৯৮৩ সালে স্ক্রিন রাইটার রিচার্ড কারটিসের সঙ্গে আবার কাজ শুরু করেন এবং সেইসঙ্গে নিজের শো নিয়ে বের হন পৃথিবী ট্যুরে। দিনে ‘দ্য টল গাই’ সিনেমার কাজ এবং রাতে থিয়েটারে ‘দ্য স্নিনজ্’-এ অভিনয় করতেন। তিনি বন্ড মুভি ‘নেভার সে নেভার এগেইন’ ছবিটিতে সিন কনোরীর বিপরীতে অভিনয় করে বেশ প্রশংসা লাভ করেন। ১৯৮৯ সালে স্টিভেন রাইটের সঙ্গে ‘দ্য অ্যাপয়েনমেন্টস অব ডেনিস জেনিংস’ নামের শর্ট ফিল্মে অভিনয় করে জিতে নেন একাডেমি অ্যাওয়ার্ড। তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি ছিল- ‘ফোর ওয়েডিংস অ্যান্ড আ ফিউনারেল’।
১৯৯০ সাল তার জীবনে উল্লেখযোগ্য বছর। এবছরই মেকআপ আর্টিস্ট সুনেত্রা শাস্ত্রিকে বিয়ে করেন তিনি। ১৯৯০ সালেই রোয়ান এটকিনসনের জীবন নিয়ে তৈরি হতে শুরু করে মি. বিন। তারই নানা মজাদার কাণ্ড-কারখানায় ভরপুর এই ব্রিটিশ কমেডি সিরিজের লেখক হলেন রবিন ড্রিসকল এবং রোয়ান এটকিনসন স্বয়ং। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি লাভ করা রোয়ান এটকিনসন ঘটনাচক্রে অভিনয় জগতে এসে পিতৃ প্রদত্ত নামটি হারিয়ে বর্তমানে সারা বিশ্বে পরিণত হয়েছেন সাড়া জাগানো দর্শকপ্রিয় মি. বিন-এ। তার অভিনীত অন্য উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হচ্ছে_ ‘দ্য সিক্রেট পুলিশ ম্যান’স বল’, ‘দ্য ব্লাক এডার’, ‘ব্লাক এডারস ক্রিসপাস ক্যারোল’, ‘ব্লাক এডার গোজ ফোর্থ’, ‘দ্য উইচেজ’, ‘বার্নারড অ্যান্ড দ্য জেনি’, ‘হট সটস পার্ট ডিউস’, ‘দ্য লায়ন কিং’ এবং ‘আ থিন ব্লু লাইন’। এগুলো টিভি সিরিয়াল এবং মুভি। ‘মিস্টার বিন মুভি’ নামে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে মি. বিনকে নিয়ে। এ ছাড়াও ‘মি. বিনস হলিডে’ তার আরেকটি বিখ্যাত ছবি।
রোয়ান এটকিনসন তথা মি. বিন’র শখ হলো স্পোর্টসকার সংগ্রহ করা। ব্রিটিশ কার ম্যাগাজিনেও নিয়মিত লেখেন তিনি। মজা পান নিজের টেনিস কোর্টের চারপাশে তার ছোট্ট রেসিং কারটি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। তবে তার কাছে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হচ্ছে মি. বিনকে অল্পতেই চ্যাপলিনিয় ক্ষমতায় আনতে পারা। অঙ্গভঙ্গি আর মুখভঙ্গির মাধ্যমে ভাষাগত বাধা অতিক্রম করে মি. বিন সহজেই জনপ্রিয় ও বিশ্বের সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে দখল করে নিয়েছেন এক নম্বর আসনটি। যা রোয়ান এটকিনসনের কাছে সত্যিই খুব রোমাঞ্চকর, আমাদের কাছেও সেরা পাওনা।