মৃদঙ্গম উৎসব ২০১৫
পলাশ মুখোপাধ্যায়
মাত্র তিন বছর বয়সেই গোবরডাঙ্গা তথা এই এলাকার সংস্কৃতি চর্চায় উল্লেখযোগ্য স্থান নিয়েছে গোবরডাঙ্গা মৃদঙ্গম। নাট্যচর্চার পাশাপাশি নানা সাংস্কৃতিক মহলেও তাদের অবাধ গতি। সম্প্রতি অশোকনগর শহীদ সদনে হয়ে গেল মৃদঙ্গম উৎসব ২০১৫। এ বছর দ্বিতীয় বর্ষে পড়ল এই উৎসব। এই উৎসবে মুক্ত মঞ্চ এবং মূল মঞ্চ মিলিয়ে দু’দিনে মোট ৭ টি নাটক মঞ্চস্থ হল। পাশাপাশি ছিল ধ্রুপদী নৃত্য, যন্ত্র সঙ্গীত, সেতার বাদন, মূকাভিনয় প্রভৃতিও।
প্রথম দিন অর্থাৎ ২৭ শে মার্চ মুক্ত মঞ্চে বিশ্ব নাট্য দিবস পালন করা হয়। মৃদঙ্গম পরিচালিত কর্মশালা ভিত্তিক নাটক ‘অদ্ভুত-কিম্ভুত’ পরিবেশন করে অশোকনগর ভারতী বালিকা বিদ্যামন্দিরের শিক্ষার্থীরা। এরপর রবীন্দ্র ভারতী থিয়েটার রেপাটরির দেবাশিস চক্রবর্তী পরিচালিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তোতা কাহিনী’ অবলম্বনে নাটক ‘বন্দি বিহঙ্গ’ মঞ্চস্থ হয়। এর পর কত্থকের আঙ্গিকে কৃষ্ণ বন্দনার মাধ্যমে মূল মঞ্চে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রদীপ প্রজ্বলন করেন বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব বিমল চক্রবর্তী, ওড়িশি নৃত্যশিল্পী গুরু পৌষালী মুখোপাধ্যায় সহ উপস্থিত বিশিষ্ট জনেরা। এ বছর মৃদঙ্গম সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয় বিমল চক্রবর্তী, গুরু পৌষালী মুখোপাধ্যায় এবং নাট্য ব্যক্তিত্ব দেবব্রত দাসকে।
এরপর অনুষ্ঠিত হয় আসানসোল রেপারটরি থিয়েটারের স্বপন বিশ্বাস পরিচালিত পরিচালিত ‘জোড়া পল্টন’ এবং কলকাতা অ্যানথেমের শুভেন্দু সরকার পরিচালিত ‘বিলাপ’ নাটক দুটি। এছাড়াও গোবরডাঙ্গা নিক্কনের তরফে ভারতনাট্যম পরিবেশন করেন প্রিয়াঙ্কা আমিন। জমজমাট এই উৎসবের প্রথম দিনে শেষে পরিবেশিত হয় মূকাভিনয়। নিজস্ব মননে নির্মিত ‘দ্য রোপ ম্যান’ মূকাভিনয় করে দেখান মৃদঙ্গমেরই সদস্য অর্ণব কুমার রায়।
দ্বিতীয় দিনের প্রথমেই ছিল মুক্ত মঞ্চে কর্মশালা ভিত্তিক নাটক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জুতা আবিস্কার’। পরিবেশন করে বিষ্ণুপুর নির্মলপ্রভা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই দিন উপস্থিত ছিলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব বিজয় ভট্টাচার্য, সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী, নাট্য সমালোচক রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখরা। মূল মঞ্চে সৌমী হালদারের সেতার বাদন মুগ্ধ করে দর্শকদের। এরপর পরিবেশিত হয় কলকাতা অন্তর্মুখের সৌমিত্র বসু পরিচালিত নাটক ‘জোলা আর সাত ভূত’। দ্বিতীয় অর্থাৎ শেষ দিনের শেষ অনুষ্ঠান ছিল মৃদঙ্গমের বরুন কর পরিচালিত নাটক ‘নিকট গঙ্গা’।
পথনাটক, মঞ্চ নাটক, ধ্রুপদি নৃত্য, যন্ত্র সঙ্গীত, মূকাভিনয়। তাপস হালদারের পরিচালনায় ২ দিনের মৃদঙ্গম উৎসব ছিল বেশ প্রাণবন্ত। মৃদঙ্গমের কর্ণধার বরুন করের কথায়, ‘সংস্কৃতি-মনস্ক মানুষের দিকে তাকিয়েই আমাদের এই প্রয়াস। তাঁদের ভালবাসায়, প্রশ্রয়ে এবং অংশগ্রহণে আগামি দিনে মৃদঙ্গম উৎসব আরও প্রসারিত হবে।’ বেশ তো সেই শুভ দিনের অপেক্ষায় রইলাম আমরাও।