রোদ চশমার ইতিকথা

ঘরের বাইরে পা ফেললেই প্রধান অসুবিধা রোদ এবং ধুলো। রোদের তীব্রতা এবং ধুলো থেকে চোখকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই জরুরি। রোদ বা ধুলোর জন্য তো আর বাইরে বেরনো বন্ধ রাখা যায় না। তবে এর প্রতিকার হিসেবে পরম বন্ধুর কাজ করে রোদচশমা, যা চোখকে দেয় স্বস্তি। প্রয়োজনের তাগিদে রোদচশমা এলেও সময়ের বিবর্তনে তা আজ রূপ নিয়েছে ফ্যাশনে। সানগ্লাসের বিক্রেতারাও এই ধারণার সঙ্গে একমত যে, সানগ্লাস এখন চোখের সুরক্ষার চেয়ে ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেই বেশি জনপ্রিয়।

চশমার প্রচলন অনেক আগে শুরু হলেও মোটামুটি ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অথবা বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সানগ্লাসের প্রচলন ঘটে। প্রাথমিক অবস্থায় চশমা ব্যবহার করা হলেও তা থেকে কাঙ্ক্ষিত উপকার না আসায় রোদচশমার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৯০০ সালের দিকে প্রথম আবিষ্কৃত হয় রঙিন কাঁচের। রঙিন সানগ্লাস তখন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তরুণ প্রজন্মের কাছে। ১৯৩৬ সালের দিকে সানগ্লাস ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়। এডউইন এইচ ল্যান্স সানগ্লাসের প্রচলন করেন।
সানগ্লাস একাধারে যেমন ফ্যাশন অনুষঙ্গ, ঠিক তেমনি চোখের সুরক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। হাভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের অপথ্যালমোলজির অধ্যাপক লুই পাসকোয়ালের মতে, ‘সাধারণত ঘরের বাইরে থাকার ফলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি সরাসরি চোখের ক্ষতি করতে পারে। আর তাই ইউভি রে (অতি বেগুনি রশ্মি) আটকাতে পারে এমন চশমা পরা উচিত। তাহলে বয়স বাড়লেও চোখের সমস্যা কম হবে।’
সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি যা আমাদের চোখের কর্নিয়া ও রেটিনার ক্ষতি করতে পারে। এই ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মিকে সানগ্লাস আমাদের চোখে পৌঁছতে প্রতিহত করে। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সূর্যের আলোর তীব্রতা বেশি থাকে, তাই এ সময় সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত। যেকোনো বয়সের মানুষই সানগ্লাস ব্যবহার করতে পারেন। তবে এর চাহিদা বেশি দেখা যায় তরুণদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও চাকরিজীবীদের মধ্যে সানগ্লাস ব্যবহারের হার বেশি।

কেমন সানগ্লাস কিনবেন
সানগ্লাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, সব সানগ্লাস সবাইকে মানায় না। যেমন যাদের মুখাকৃতি একটু লম্বাটে তাদের ক্ষেত্রে মাঝারি আকারের স্কোয়ার ফ্রেমের সানগ্লাস বেশ মানাবে। আবার ছোট আকৃতির সানগ্লাসও ভালো মানাবে। আবার যাদের মুখ গোলাকৃতি ও বড় তাদের মোটা ফ্রেমের ভারী গ্লাসের একটু বড় সাইজের যেকোনো শেপের সানগ্লাস ভালো মানাবে। তবে পুরোপুরি রাউন্ড শেপের সানগ্লাস ভালো মানাবে গোলাকৃতির ছোট মুখে। যেকোনো শপিংমল থেকে শুরু করে রাস্তার ফুটপাথেও সানগ্লাস কিনতে পাওয়া যায়। আমাদের দেশেও বিশ্বমানের ও ব্র্যান্ডের সানগ্লাস পাওয়া যায় যেমন- গুচি, বেন্ড ওয়াইজকার ডিওর, মার্ক জ্যাকসন, আরমানি, ডিএনজি, রে ব্যন, ওকলে, প্যারাডা ইত্যাদি। রে ব্যন ব্র্যান্ডের সানগ্লাস পাবেন পাঁচ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে, গুচি পাবেন তিন হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায়।

দরদাম :
সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের সানগ্লাস পাওয়া যায়। অভিজাত শপিংমল ছাড়াও বিভিন্ন নামীদামি অপটিক্যাল শপে পাওয়া যাবে ব্র্যান্ডের সানগ্লাস।
যত্ন নেবেন কিভাবে :
তবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অযত্ন-অবহেলায় সানগ্লাস খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। প্রখর রোদেলা দিনে পথ চলতে গিয়ে ঘামে ভিজে যেতে পারে অথবা ধুলোময় হয়ে উঠতে কিংবা অযত্নে স্ক্র্যাচ পড়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে আপনার শখের সানগ্লাস। এ ক্ষেত্রে দিনশেষে টিস্যু অথবা নরম কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে রাখতে হবে। মাঝে মধ্যে স্পিরিট-জাতীয় ইমালশন লিকুইড দিয়ে পুরো সানগ্লাস মুছে চকচকে করে রাখলে আরো ভালো। তবে মারকারি গ্লাসের ক্ষেত্রে এই লিকুইড ব্যবহার না করে শুকনো নরম কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুছে রাখাই ঠিক হবে।

সানগ্লাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মনে রাখা উচিৎ :
* অফিসিয়াল কাজে এবং বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বের হওয়ার সময় একই শেডেড সানগ্লাস ব্যবহার না করে বাছাই করুন মানানসই শেডের সানগ্লাস।
* কথা বলার সময় চোখের দৃষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই কথা বলার সময় সানগ্লাস খুলে রাখুন।
* মার্কেটে, ক্লাসে বা ইনডোর গেমসের স্টেডিয়ামে, রুমের ভেতর বা কোনো অনুষ্ঠানে সানগ্লাস পরে বসে থাকবেন না, যদি না আপনার চোখের কোনো সমস্যা থাকে।
* একই সানগ্লাস সব সময় ব্যবহার না করে সময়ের সাথে সানগ্লাস পরিবর্তন করুন। এতে নিজেকে সবার কাছে আরো আকর্ষণীও করে উপস্থাপন করতে পারবেন।
* নিজের চেহারা বা চুল ঠিক করতে অন্যের সানগ্লাসকে আয়না হিসেবে দেখবেন না। এতে আপনার ব্যক্তিত্ব ক্ষুণ্ন হবে।

রোদচশমা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই হয় এমন চশমা পরাই যুক্তিসঙ্গত। আর যেহেতু ব্যবহারের ক্ষেত্রে যত্নের ওপরই নির্ভর করে বস্তুর স্থায়িত্ব, তাই আপনার রোদচশমাটিও যত্ন পাওয়ার দাবিদার। রোদ আর ধুলোবালিতে চোখের সুরক্ষায় আপনার নিত্যসঙ্গী হোক রোদচশমা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 − seven =