তিতিক্ষা

গোপাল মিস্ত্রি


আমার বেশ লাগছে। লাইফ লাইনের আই সি ইউতে নাকে মুখে নল গুজে পড়ে থাকতে আমার ভালো লাগছিলো না। এখন এই যে নিজের বাড়ির উঠোনে পাতা মাদুরের ওপর শুয়ে আছি, বেশ আরাম লাগছে। আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও টের পাচ্ছি আমার চারপাশে কী হচ্ছে। আমার শীত করছে বলে একটা পাতলা সাদা চাদর গলা অবধি ঢেকে দিয়েছে। আমার পাশে এক গোছা ধূপ জ্বেলে দিয়েছে কেউ। গন্ধটা অতটা উগ্র নয়, বেশ মিষ্টি। আমার বুকের ওপর রজনীগন্ধার মালা দিয়েছে। আমার মনে পড়ছে সতীনাথের সেই গানটা,………… এবার আমার মাটিতে বিছানা কর……

তুমি বারান্দায় বসে বসে আমাকে দেখছ। আমি জানি লাইফ লাইন থেকে নিয়ে আসার পর আমাকে ঘরে ঢুকতে দাওনি। উঠোনে তুলসী মঞ্চের সামনে বিছানা পেতে দিয়েছ সবাই মিলে। উঠোনে তুলসী মঞ্চের সামনে বিছানা পেতে দিয়েছ সবাই মিলে। মাথার অপর একটা ছাউনি দিয়েছে পাড়ার ছেলেরা। আমার পাশে বসে আমাকে ছুঁয়ে কাঁদছে আমার মেয়েটা। ছোট্ট নাতিটা পাশে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ছেলেটা এখনও এসে পৌঁছয়নি। বাঙ্গালোর থেকে আসতে দুপুর হয়ে যাবে। কাল রাতেই ওকে খবর দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়েই সকালের ফ্লাইট ধরেছে। দমদম থেকে নিশ্চয়ই গাড়ি নিয়ে চলে আসবে। সে না আসা পর্যন্ত আমি এখানেই শুয়ে থাকব।
তোমার চোখে তো একটুও জল নেই, বেলা। পাড়ার মহিলারা তোমার পাশে বসে আছে। ওরা নিজেদের মধ্যে নিচুস্বরে আমাকে নিয়েই কথা বলছে। কিন্তু তুমি চুপ করে কিছু ভাবছ। কী ভাবছ তা অবশ্য আমি জানি। লাইফ লাইন থেকে তোমার কাছে খবরটা আসার পরেও তুমি নিরুত্তাপ ছিলে। একবারও কাঁদনি। আমি মহাভারতের সঞ্জয়ের মতো দিব্য চোখে দেখতে পেয়েছি। আসলে তুমি তো জানতেই। তার জন্য তুমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলে, তাই না ? অনেকদিন ধরে আমার শরীরটা খারাপ যাচ্ছিল। রিটায়ার করার পর থেকেই যেন আরও একটু বেশি করে ভুগছিলাম। কয়েকদিন আগে আমাকে লাইফ লাইনে ভরতি করেছিলে। তখনই কেউ কেউ বলেছিল, কলকাতায় বড় হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কিন্তু তুমি সায় দাওনি। তুমি বলেছিলে, ‘কী হবে নিয়ে? যে বাঁচবে না তাকে বড় হাসপাতালে নিয়ে সব সঞ্চয় শেষ করে কী লাভ ? যদি বেঁচে ফেরার আশা থাকত তাহলে না হয় নেওয়া যেত।’ তারপর আর কেউ কিছু বলেনি। ছেলে এবং মেয়ে জামাইও আর জোর করেনি।
আমি জানি তো, তুমি আমাকে আর আটকাতে চাইছ না। আমারও যে খুব ভাল লাগছিল তা নয়। তোমার সঙ্গে আমার ঘর করা তো প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর। সেই থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়। সত্যি বলতে কি আমারও আর ভালো লাগছিল না। চুপি চুপি তোমাকে বলছি, আমারও ইচ্ছে করছিল নতুন জগৎ দেখতে, নতুন কিছু করতে। একই চর্বিতচর্বন আর সইছিল না। তাই ইচ্ছে করেই লাইফ লাইনে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছিলাম। আমি জানতাম তো, লাইফ লাইন থেকে ফিরে আর তোমার সঙ্গে এক বিছানায় শোব না আমি। আমাকে আলাদা বিছানা পেতে হবে।
এখন উঠোনে ভিড় বেড়ে গেছে, আত্মীয়স্বজন, পাড়ার লোকজন ছাড়াও আমার চেনা জানা অনেকেই তো এসেছে দেখছি। পাড়ার সিনিয়ার মোস্ট সিটিজেন অমলদা কী বলল তোমাকে ? মন খারাপ করতে বারণ করল ? অমলদা জানে না তো, তোমার মন খারাপই হয় না। আমি শুনতে পাচ্ছি তোমার কাছে এসে অনেকে অনেক কথা বলছে। যেমন ওই ছোকরাটা বলল, বউদি, কোনও অসুবিধা হলে সঙ্গে সঙ্গে খবর দেবেন।
কেউ বলল, বিভাসদা এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন তা ভাবতে পারিনি।
কে যেন বলল, এই বাড়িতে এবার একা হয়ে গেলেন বউদি। মেয়ে থাকে শ্বশুরবাড়ি। ছেলে তার কর্মস্থলে। বিভাসদা চলে গেলেন। এবার কী করবেন ? নিশ্চয় ছেলের কাছে চলে যাবেন।
আর একজন বলল, এই বাড়িঘর ফেলে কি আর চলে যেতে পারবেন ? ঠিক এখানেই থাকবেন।
অন্য কে যেন বলল, ছেলে কি আর মাকে এখানে একা ফেলে চলে যাবে ? সে ঠিক মাকে বুঝিয়ে নিয়ে চলে যাবে।
আর একজন বলল, ‘ আরে ধুর, নিজের বাড়ি ছেড়ে কেউ কি অন্য জায়গায় গিয়ে টিকতে পারে ?
আরও কত রকমের গুঞ্জন চলছে। কথাগুলো আমার কানে আসছে। তুমিও তো শুনতে পাচ্ছ বেলা। কিন্তু তুমি কী ভাবছ তা কারও জানা নেই। সে শুধু আমি জানি। আর পাড়ার লোকেরা নিজেদের মতো করে তোমার আগামী দিনগুও কেমন যাবে তাই নিয়ে অহেতুক চর্চা করছে।
আমি জানি এসব শুনে তুমি মনে মনে হাসছ। তোমার ভিতরের হাসিটা অবশ্য কেউ দেখতে পাচ্ছে না। আমিও তো তোমাকে কতবার বলেছি, আমার অবর্তমানে তুমি ছেলে আর মেয়ের বাড়ি করে কাটিয়ে দিতে পারবে। তুমি তখনও কিছু বলতে না। হয়তো বলতে ইচ্ছে করত না। তোমার ভাবনাটা তোমার নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রেখে দিতে। আমি কিন্তু তখনও বুঝতে পারতাম তুমি কী ভাবছ। শুধু তোমাকে বলিনি।
তুমি হয়তো ভাবছ আমি তোমাকে বুঝতে পারিনি। তা কিন্তু ঠিক নয় বেলা। আমি ঠিক বুঝতে পারতাম। তুমি ভাবতে তোমার মনের খবর আমি রাখিনি। তা নয় বেলা। তুমি আমার প্রতি কর্তব্য করতে। আর তোমার মনের গহনে ছিল অন্য কিছু। আমি ঠিক বুঝতাম। কিন্তু সব কিছু সব সময় ধরে রাখলে যে মনে কষ্ট বাড়ে। তাই ওসব নিয়ে আমি ইচ্ছে করেই উদাসীন থাকতাম। তুমি ভাবতে আমি অফিসের কাজকর্ম, ছেলে মেয়ের প্রতি দায় দায়িত্ব নিয়ে দিব্যি আছি। আর তোমাকে ভালবাসি। যেমন একজন স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীর ভালোবাসা থাকে। যা এক সময়ে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।
আমি সব বুঝতাম, কিন্তু নিশ্চিত ছিলাম তুমিই আমাকে বুঝতে না। তোমার প্রতি, ছেলে মেয়ের প্রতি আমার কর্তব্যে তো খামতি ছিল না, তাই আমার উদাসীনতাকে তুমি অবজ্ঞা বলতে পারনি।কিন্তু তোমার কর্তব্যের আড়ালে যে অন্য এক বেলা লুকিয়ে আছে তা আমি ঠিক ধরেছিলাম।
তোমার সঙ্গে আমার বিয়েটা কী অদ্ভুতভাবে হল, তাই না ? খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে আমি তোমাকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমার মতো রোগা কালো ঢ্যাঙা ছেলেটাকে তুমি পছন্দই করনি। তখন আমার আঠাশ আর তোমার কুড়ি। কিন্তু সত্যি বলছি তোমাকে প্রথম দিন্দেখেই আমার ভালো লেগে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল, তোমাকে ছাড়া আর কাউকে আমি বিয়ে করব না। তাই তোমার বাড়ি থেকে যখন না করেই দিল, তখন খুব কষ্ট হয়েছিল। ভগবান আমাকে এমন চেহারা কেন দিল যে কেউ আমাকে দেখে পছন্দই করবে না ? তাই একটা চিঠি লিখেছিলাম তোমার দাদাকে। কী আশ্চর্য, তারপর তোমার দাদারা রাজি হয়েছিলেন। তাই বিয়েটা হয়ে গিয়েছিল। তুমি সত্যিই আমাকে মেনে নিয়েছিলে কিনা তা কিন্তু এই পঁয়ত্রিশ বছরে কোনওদিন বলনি। বিয়ের পর অনেকবার জিঞ্জেস করেছি। তুমি বলইনি। স্বীকার করছি আমিও জানতে পারিনি তোমার মনের সেই কথাটা। অবশ্য তুমি আমার স্ত্রী হয়েই ছিলে। আমার সন্তানের মা হয়েছ। কখনও বাধা দাওনি। তুমি সব কর্তব্য করেছ। তবুও বুঝতে পারতাম কোথায় যেন একটু ফাঁক রয়ে যাচ্ছে। অথচ কোনওদিন তোমার আচরনে তা প্রকাশ পায়নি। সেই ফাঁকটা কিছুতেই তুমি ভরাট করতে দিতে না।
তুমি আমাকে বুঝতে না দিলেও আমি বুঝতাম সেই দুরত্বটা একটু একটু করে বাড়তে শুরু করেছিল অতনু আমাদের বাড়িতে আসার পর। ছেলেটা আমার অফিসের কলিগ। সদ্য চাকরিতে যোগ দিয়েছিল। ছোট ভাইয়ের মতো। তাই ওকে একদিন ডেকে নিয়ে গিয়েছিলাম বাড়িতে। সেই থেকে তোমাকে বউদি বউদি করে মাতিয়ে রাখত বাড়িটা। বাড়ি থেকে অনেক দূরে একা এসেছে বলে তুমি একটু বেশিই যত্ন করতে শুরু করেছিলে। ভালো কিছু রান্না করলেই ওর কোয়ার্টারে পাঠিয়ে দিতে। আমি কোনওদিন কিছু মনে করিনি। আমিও কেমন যেন অনেক ব্যাপারে ওর ওপর নিরর্ভশীল হয়ে পড়েছিলাম।
একদিন আবিষ্কার করলাম, তোমরা অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছ। তখনও ছেলেটা ছোট। মেয়েটা হয়নি। কিন্তু আমল দিলাম না। নিজেকে সন্দেহবাতিক বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলাম না। এসব নিয়ে তোমাকে কিছু বললে হয়তো আমার ছোট্ট সংসারে শান্তিটাই নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তোমাকে কখনও কিছু বলিনি। জানতাম বদলির চাকরি। কিছুদিনের মধ্যেই বদলি হয়ে চলে যাব। অতনুও চলে যাবে। তখন আর এসব থাকবে না।
একদিন সত্যি সত্যিই বদলি হলাম। কিন্তু যোগাযোগটা থেকেই গেল। ছুটিছাটা পেলে অতনু চলে আসত আমাদের বাসায়। আমি হয়তো তখন অফিসে। অতনু এলেই তুমি খুশি হতে। ও চলে যাওয়ার পরও তার রেশ ধরা থাকত তোমার ঠোঁটের কোনায়। আর তাই দেখে আমি খুশি হতাম। সত্যি খুশি হতাম কিনা, তা না হয় নাই বা জানলে। কিন্তু তোমার খুশি হওয়াতে আমি কোনওদিন বাধা দিইনি। আমি জানতাম অতনু সংসারি হলে একদিন এই সুতোটা ছিঁড়ে যাবে।
কিন্তু সুতো ছিঁড়ে একটা ঘুড়ি চলে গেলে যে সুতোর মাথায় আর একটা ঘুড়ি জোরা যায়, সেই সত্যটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। একদিন দেখলাম পুরনো ঘুড়িটা সুতো ছিঁড়ে শূন্যে মিলিয়ে গেল। তুমি কিছুদিন মনমরা হয়ে রইলে। সংসারে সব কাজ করতে। আমার দেখভাল করতে। ছেলে মেয়েকে মানুষ করতে লাগলে। মিথ্যে বলব না তোমার কর্তব্যে কোথাও কোন ফাঁক ছিল না। কিন্তু তোমার মুখের সেই স্বভাবিক হাসিটা কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। যে প্রানখোলা হাসিটা বিয়ে হওয়া ইস্তক শত চেষ্টা করেও আমি কোনওদিন দেখতে পাইনি, তা নিয়ে এসেছিল অতনু। কিন্তু অতনুই যেন তোমার সেই খুশিটাকে চুরি করে নিয়ে চলে গেল।
তারপর আবার যেদিন একটা ঘুড়ি এসে গেল তোমার সুতোর মাথায়, সেদিন আমার যেন সেই পুরনো খুশির ছোঁয়া ফিরে এল। দীপ্তেন্দু এল আমাদের বাড়ীতে। তোমার চেয়ে বয়সে ছোটই হবে। আমরা এ পাড়ায় বাড়ী করে আসার পর বেকার ছেলেটা আমাদের ভালমন্দের খোঁজ নিত। আমিও ভরসা করতাম ছেলেটাকে। একদিন সেই ছেলেটাই ঘনিষ্ট হয়ে উঠল আমাদের পরিবারে। কিন্তু সে যে সিঁধ কেটে আমার অন্দরমহলে ঢুকে পড়েছে তা প্রথমটা বুঝতে পারিনি। সত্যি বলছি, পুরনো অভিঞ্জতা থাকা সত্বেও মনেও আসেনি কখনও। কারন আমি সন্দেহবাতিক নই। কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম তখন নিজের ভাগ্যের দোষ দেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। ছেলে মেয়ে দু’টো বড় হয়েছে। তাদের সামনে এসব নিয়ে কিছু বলা যায় না। আমিও চাই না কোনও কাদা ছোঁড়াছুড়ি হোক। তাই আমি সব কিছুই হাসিমুখে মেনে নিয়েছি। তুমি কিন্তু কোনও দিন টের পাওনি আমি অনেক কিছুই জেনেছিলাম। তোমাকে আমি বুঝতে দিইনি। আমাদের দাম্পত্যের শুরুতে যে কথা অনেকবার জিঞ্জেস করেও তোমার কাছ থেকে উত্তর পাইনি, বরং নিপুন অভিনয়ে তা আড়াল করেছো, সেই উত্তরটাই যেন আমি পেয়েছিলাম। তুমি আমাকে কোনওদিন মন থেকে মেনে নিতে পারনি। তাই বারে বারে অন্যকিছু খুঁজেছ। তোমার মনের ওপর পরদা সরিয়ে আমি হয়তো কোনওদিন ভিতরে ঢুকতে পারিনি। আমি সেখানেই হেরে গিয়েছি।
কিন্তু তুমি কি কোনওদিন আমাকে বুঝতে পেরেছ ? না, পারনি। আমি উদাসীনতা দেখিয়েছি। যেন কোনঅকিছুই আমি জানি না। আমি কিন্তু সব বুঝেছি। আর আড়ালে হাসিমুখে নিজের ভাগ্যের দোষ দিয়েছি। যাকে স্ত্রী বলে ঘরে এনেছি, যাকে আমার সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি, সে সারাজীবন আমার সঙ্গে অভিনয় করে গিয়েছে। এমন কত গল্পই আকছার সোনা যায়। গল্প উপন্যাস এমন ঘটনার ছড়াছড়ি। তা নিয়ে কত বিবাদ, মনকষাকষি। তা নিয়ে মারামারি খুনোখুনিও হয়। কিন্তু আমি দুঃখ পেলেও হাসিমুখে মেনে নিয়েছি। হয়তো আমি যা তোমাকে দিতে পারিনি, তোমার মনের সেই ক্ষুধা মিটিয়েছে অতনু কিংবা দীপ্তেন্দু। অথবা এ তোমার নিছকই খেলার খেয়াল।
অই যে ছেলেটা এসে পৌঁছল। এবার আমার শেষ যাত্রা শুরু হবে। ছেলেটা মনে হয় আমার লাইফ লাইন থেকে ফিরে আসার খব্র পেয়ে খুব কেঁদেছে। রাতে ঘুমোয়নি। ওর চোখ দু’তো বলছে। এখনও দেখ ও গুমরে রয়েছে। ওর বন্ধুরা ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। তুমি এখনও উদাস চোখে বসে আছ। আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার শুকনো চোখ। এই মধ্য পঞ্চাশেও তোমার চোখ দু’টো কী গভীর ! এখনও যেন সেই আগের মতোই আকর্ষণীয়।
দীপ্তেন্দু আমার শেষ যাত্রার সব কিছু তদারকি করছে।তুমি তার ব্যস্ততার দিকে বারেবারে ফিরে দেখছ। ওরা সবাই বলাবলি, এরপর তুমি ছেলের কাছে বাঙ্গালোরে চলে যাবে।বা ছেলে তোমাকে জোর করে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমি জানি, তুমি কোথাও যাবে না। তুমি এই বাড়িতেই থাকবে। দীপ্তেন্দু তোমার দেখভাল করবে। তোমার দূর সম্পর্কের একটা বোনের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে তাকে সংসারী করলেও আমি হীন তোমার সংসার দেখার দায়িত্বও নিয়ে নেবে সে। সে হাসিমুখে ছেলেকে বলবে,তোর বাবার হাতে গড়া এই বাড়ি ছেড়ে কি তোর মা যাবে? থাক এখানে,আমরাই সব দেখব।
আজ তোমাকে একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে বেলা। আমি জানি আমার জন্য কোনওদিন তোমাকে এক ফোটাও চোখের জল ফেলতে হয়নি। তুমি ফেলনি। আমি তোমাকে এই বিড়ম্বনায় কখনও ফেলিনি।কিন্তু আজ তোমার কাছে একটা জিনিসই আমি চাইব। বাড়ি থেকে শ্মশান আর কতটুকুই বা দূর। সেই চাওয়াটুকু দেওয়ার জন্য না হয় আর একটু দেরি হবে আমার শেষ যাত্রার। তাতে কি আর ক্ষতি হবে বল? যদি পার তোমার ওই কাজল কালো চোখ দিয়ে আমার জন্য এক ফোটা জল ফেল। আমি সারা জীবন তোমার হাসিমুখ দেখতে চেয়েছি। আজ খুব ইচ্ছে করছে তোমার জল ভরা চোখ দুটো দেখতে। ওইটুকু দেখতে পেলেই আমি তোমার সব ভুল ক্ষমা করে দেব। কথা দিলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 5 =