অটল পেনশন স্কিম, APS (Atal Pension Scheme)

বিজয়  মুখোপাধ্যায় ##

সর্বস্তরের মানুষের জন্য নিজ নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী জীবনে আর্থিক শৃঙ্খলা জরুরী। বিনিয়োগ (Investment) এর পরিবর্তে হয়ত সঞ্চয় (Savings) শব্দটি ব্যবহার করলে অনেকের কাছে বিষয়টি সহজ বোধ্য হয়। কিন্তু ‘বিনিয়োগ’ শুধু সঞ্চয়ে সীমাবদ্ধ নয়; বিনিয়োগ মানে শুধু Bank, Post-Office, Share market বা Mutual Fund এর Investment নয়। এর বাইরেও ‘বিমা’ থেকে শুরু করে ‘বিষয়-আশয়’, ‘আয়কর’ থেকে শুরু করে ‘উইল’ সবই এ বিষয়ের অর্ন্তগত। অবেক্ষণে এই সকল বিষয়ে ধারাবাহিক ভাবে বিষয় ভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনার এই পর্বে থাকছে  অটল পেনশন স্কিম বা APS (Atal Pension Scheme) নিয়ে কিছু কথা।

APS বা Atal Pension Scheme হল একটি অবসরকালীন জীবনের আর্থিক নিশ্চয়তার জন্য প্রকল্প। যে কোন ভারতবাসী এই প্রকল্পে যোগদান করতে পারলেও মূলত আর্থিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণীর কথা ভেবে এই প্রকল্প তৈরি হয়েছে। ৬০ বছর বয়সের পর অবসর জীবনে নিশ্চিত মাসিক রোজগার এর জন্য এই প্রকল্প। ২০১৫ -২০১৬ অর্থবর্ষের বাজেটে বিভিন্ন প্রকার Pension প্রকল্পের পাশাপাশি এই প্রকল্পটিও ঘোষিত হয়।

কি ভাবে APS A/c করবেনঃ- যে কোন Bank বা Post Office এ APS A/c খোলা যায়। তবে অবশ্যই আপনার নামে সেই Bank বা Post Office এর নির্দিষ্ট শাখায় Savings A/c থাকতে হবে। A/c শুরু করার সময় আপনাকে Option দিতে হবে যে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আপনি মাসিক কত টাকা হিসাবে Pension পেতে চান। এক্ষেত্রে মাসিক ১০০০ টাকা, ২০০০ টাকা, ৩০০০ টাকা, ৪০০০ টাকা, ও ৫০০০ টাকা এই মোট পাঁচটি Option আছে। আপনার দেওয়া Option অনুযায়ী স্থির হবে আপনাকে মাসিক কত টাকা করে জমা দিতে হবে।এক্ষেত্রে বয়স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী যে কেউ এই প্রকল্পে যোগদান করেতে পারেন। সুতরাং যত কম বয়সে শুরু করা যাবে, Monthly Contribution এর পরিমান ততই কম হবে।

ধরা যাক একজন ৬০ বছর বয়সের পর মাসিক ৫০০০ টাকার Pension এর Option দিলেন। তার বর্তমান বয়স যদি ১৮ বছর হয় তবে সেক্ষেত্রে তাকে প্রতি মাসে ২১০ টাকা করে জমা দিতে হবে। অথচ তার বয়স যদি ৪০ বছর হত সেক্ষেত্রে তাকে প্রতিমাসে ১৪৫৪ টাকা করে জমা দিতে হত। 

APS কে বা কারা নিয়ন্ত্রন করে? ঃ- ভারতবর্ষে PFDRA (Pension Funds Regulatory and Development Authority) APS এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

APS এর সুবিধাঃ-  প্রথমত ভারত সরকারের এটি একটি সর্বোচ্চমানের সুরক্ষাযুক্ত নিশ্চিত আয়ের Pension প্রকল্প। ৬০ বছর বয়সের পর মাসিক Pension তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন ধরে পাবেন। Pensioner এর মৃত্যুর পর তার Spouse মাসিক একই হারে আমৃত্যু Pension পেতে থাকবেন । উভয়েরই মৃত্যর পর যিনি Nominee থাকবেন তিনি এককালীন একটি অর্থ ফেরত পাবেন। এই সংক্রান্ত হিসাব নীচের সারনীতে দেওয়া হল,-

(a)          এককালীন প্রাপ্ত অর্থ ১,৭০,০০০ টাকা ( মাসিক ১০০০ টাকা Pension এর ক্ষেত্রে)

(b)          এককালীন প্রাপ্ত অর্থ ৩,৪০,০০০ টাকা ( মাসিক ২০০০ টাকা Pension এর ক্ষেত্রে)

(c)           এককালীন প্রাপ্ত অর্থ ৫,১০,০০০ টাকা ( মাসিক ৩০০০ টাকা Pension এর ক্ষেত্রে)

(d)          এককালীন প্রাপ্ত অর্থ ৬,৮০,০০০ টাকা ( মাসিক ৪০০০ টাকা Pension এর ক্ষেত্রে)

(e)          এককালীন প্রাপ্ত অর্থ ৮,৫০,০০০ টাকা ( মাসিক ৫০০০ টাকা Pension এর ক্ষেত্রে)

Income Tax এর সুবিধা ঃ- Old Tax Regime এ 80C ধারায় 1.5 lakh এর Income Tax এর সুবিধার পাশাপাশি 80CCD ধারায় অতিরিক্ত ৫০,০০০.০০ টাকা Tax ছাড় এর সুবিধা এক্ষেত্রে পাওয়া যায়।

APS A/c Open করার জন্য প্রয়োজনীয় documents ও নিয়মাবলীঃ-

(i)            আপনাকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।

(ii)           আপনার নামে Bank/ Post Office এ Savings A/c থাকতে হবে।

(iii)          আপনার বয়স ১৮ থেকে ৪০ এর মধ্যে হতে হবে।

(iv)         আপনার সচিত্র পরিচয়পত্র।

(v)          সঠিকভাবে পূরণ করা Nomination form.

মনে রাখা দরকার যে, আপনার নামে EPF/NPS/PPF এর A/c থাকলেও আপনি APS A/c করতে পারবেন।

সরকারী সুবিধাঃ- যারা ০১.০৬.২০১৫ থেকে ৩১.০৩.২০১৬ এর মধ্যে APS A/c Open করেছেন তাদের ক্ষেত্রে Government আপনার পাশাপাশি APS A/c এ Co-contribution করবে। এক্ষেত্রে Beneficiary যদি কোন সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা বা EPF এর অর্ন্তভুক্ত হন তবে তিনি Government Subsidy পাবেন না। ২০১৫-২০১৬ অর্থবর্ষ থেকে শুরু করে ২০১৯-২০২০ অর্থবর্ষ পর্যন্ত Govt. এই Co-contribution করবে। এক্ষেত্রে আপনার দেয় অর্থের ৫০% বা বার্ষিক ১০০০ টাকার মধ্যে যেটি কম হবে সেটি Govt. Subsidy হিসাবে দেবে।

অন্যান্য সুবিধাঃ- আপনি Pension এর Contribution বাড়াতে পারেন বা যে কোন সময় frequency change করতে পারেন অর্থাৎ Monthly থেকে Quarterly or Half yearly or Annual Mode এ যেতে পারেন। যদি কোন Beneficiary ৬০ বছর বয়সের পূর্বে মারা যান সেক্ষেত্রে তার Spouse/ Nominee চাইলে A/c continue করতে পারেন বা বন্ধ করেও দিতে পারেন।

বিশেষজ্ঞের মতামত ঃ- বৃদ্ধ বয়সে একটু নিশ্চিন্ত অবসর যাপনের লক্ষে কর্মজীবনের শুরু থেকে অবসরকালীন তহবিল গড়ে তোলার দিকে নজর দেওয়া উচিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌবন কালে নানান সমস্যা ও চাহিদা মেটাতে গিয়ে অবসর জীবনের কথা আর ভাবাই হয়ে ওঠে না। তবুও বলব খুব অল্প পরিমান অর্থও যদি মাসিক খরচ থেকে বাঁচিয়ে অবসর জীবনের জন্য সঞ্চয় করা যায় তবে বৃদ্ধ বয়সে, যখন কি না শারীরিক সক্ষমতা প্রায় থাকে না, সেই সময় অপরের অনুগ্রহে না থেকে নিজের মত করে বাঁচার একটু দিশা পাওয়া যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 3 =