উৎসব না মৃত্যুর সাইরেন
বটু কৃষ্ণ হালদার
নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান এই ভিত্তি তে ভারত বর্ষ সর্ব ধর্ম সমন্বয় এর দেশ হিসাবে চিহ্নিত হয় বিশ্ব বাসির কাছে। বিশ্বের সমস্ত দেশ যেখানে ধর্মের ভিত্তিতে গঠন করা হয়েছে সেখানে ভারত একমাত্র ব্যতিক্রম দেশ হিসাবে চিহ্নিত। আগেই বলেছি সেখানেই হয় তো কফি ন এর শেষ পেরেক টা পোতা হয়েছিল।
উৎসব সম্পর্কে বিশ্ব কবির ভাষায় “মানুষ উৎসব করে, মানুষ যেদিন আপনার মনুষ্যত্ব শক্তি বিশেষ ভাবে স্মরণ করে, বিশেষ ভাবে উপলব্ধি করে সেইদিন। প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দিন একাকী, কিন্তু উৎসব এর দিনে বৃহৎ মানুষ, সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একাত্ম হইয়া বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তির অনুভব করিয়া মহৎ”
উৎসব বলতে মূলত আনন্দ ময় অনুষ্ঠান কে বোঝায়। এর মধ্যে দিয়ে মানুষ একা নয় সবার আনন্দ প্রকাশ পায়। ইংরেজি শব্দ” Festival”
কথাটির অর্থ হলো উৎসব। তবে festival কথাটির অর্থ ব্যপক ও বিস্তারিত। ব্যক্তি গত নয় এটি সমাজের সাথে সম্পর্কিত। ঋতু বৈচিত্র্য ময়
আত্ম প্রকাশের রঙ্গ মঞ্চে ভারত এ বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, ও সংস্কৃতিক অনেক উৎসব পালিত হয়। উৎসব জীবনের ছন্দ পতন, প্রতিদিনের একাকীত্বতা, যবনিকা, আত্মার দিগন্ত প্রসারের চলন্তিকা। উৎসবের মধ্যে দিয়ে সামাজিক সমন্বয় এর বিকাশ ঘটে। মানুষ মানুষের সম্প্রীতির মেল বন্ধন হয়। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত তা থেকে থেকে মুক্তির উপায় উৎসব। তাই বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের উৎসব লেগে থাকে ভারতে। কখনও কখনও এই উৎসব এর সীমানা ছাড়িয়ে প্রভাব ফেলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। এই উৎসব গুলোকে বিশেষত চার ভাগে ভাগ করা যায়। 1।।।ধর্মীয়, 2।।সামাজিক ,3।।সংস্কৃতিক, 4।।জাতীয়
ধর্মীয় উৎসব গুলি হল মুলত, দুর্গা পূজা, জগধাত্রী পূজা, কালী পূজা, দোল যাত্রা, ঝুলন যাত্রা, ছট পুজা,বড়োদিন, ঈদ – উল – ফিতর, মহরম, বিহু উৎসব, ওনাম,! পোঙ্গল, ইত্যাদি উৎসব।
সামাজিক উৎসব গুলি হল নবান্ন, হালখাতা, বিবাহ, ভাইফোটা জন্মদিন, শ্রlদ্ধ, পৌষ পlর্বন ইত্যাদি।
সংস্কৃতিক উৎসব গুলি হল নাটক, যাত্রাপালা, সার্কাস, রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, বর্ষ বরণ, খেলা ধুলা, মেলা ইত্যাদি।
এবং জাতীয় উৎসব গুলি হল শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, ভাষা দিবস, এগুলি যেমন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা হয় তেমনই সামাজিক ভাবে ও পালন করে থাকি।
আপনার আনন্দ অন্য কারো দুঃখের কারণ না হয়, এই বার্তা প্রচলিত হোক সর্ব ক্ষেত্রে। এই বিশাল আয়তন দেশে উৎসব পালন করতে গিয়ে আমরা নিজেরাই নিজেদের মৃত্যুর কারণ হয়ে পড়েছি, আজ তা ভাবার সময় বোধ হয় করো নেই। ঠিক যেমন ব্রিটিশ রা দুই শত বছর রাজত্ব করেছিল তার মূল কারণ কিন্তু আমরা এ কথা কি অস্বীকার করতে পারি কেউ? একটি উৎসব পালন করতে যেমন বহু অর্থ ব্যয় হয় তেমন শ্রম। অথচ অনাহারে মরা শিশু, কৃষক, গরিব দের উচ্চ স্বর এর মাত্রা কে ও ছাড়িয়ে যায় উৎসবের রেশ। কোটি কোটি অর্থ ব্যয় করে উৎসবের আয়োজন করা হয় তেমনই সেই আবর্জনা শেষে ফেলে দিতে হয় লোকালয়ে, নয় তো গঙ্গার জলে তার উপর নেশা তে আসক্ত হয়ে নানাবিধ অসামাজিক নিয়ম বিরোধী কার্য কলাপ করেন, এক সঙ্গে জল দূষণ সঙ্গে সামাজিক দূষণ ও নিয়ম করে বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। সরকার কড়া হতে পদক্ষেপ নিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ বর্জন থেকে ব্যহত করতে পারে নি যা কিনা দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে।
ও গঙ্গা তুমি, ও পদ্মা তুমি বইছ কেনো? আজ গঙ্গার উপর চলেছে নির্মম অত্যাচার, সইছে নীরব অপমান। বুড়ো শিবের জ টা দিয়ে, হিমালয় এর পাদদেশ গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে সৃষ্টি হয়ে আজ সমস্ত ভারত বর্ষকে পূণ্য ভূমি করে তুলেছে। তার শাখা প্রশাখা সমস্ত ভারতে বিস্তৃত হয়ে ভারত কে করে তুলেছে সবুজ সতেজ প্রাণবন্ত কৃষি প্রধান নদীমাতৃক দেশ হিসাবে চিহ্নিত করেছে বিশ্বের মানচিত্র তে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সজীব কুল এ জলের গুরুত্ব হয় তো ব্যখ্যা করার দরকার নেই, তবে জলের অসীম গুরুত্ব বোঝেন বিশেষত মরু প্রধান দেশ গুলি আজ সেই জল কে আমরা সংরক্ষণে সহায়তা না করে তাকে রোজ রোজ ধ্বংস করে চলেছি আমরা। বহু আন্দোলন করে ও দূষণ মুক্ত নদী গড়ে তুলতে পারি নি, হয় তো আমাদের প্রয়াস টা বাহ্যিক, আন্তরিক নয় বা আমরা গুরুত্ব দেবার চেষ্টা করিনি। তার ফলে আমরা জেনে বুঝে কিন্তু এমন বিষ পান করি রোজ। বিষাক্ত জল এর দ্বারা সব থেকে বেশি ক্ষতি গ্রস্থ হয় ভবিষ্যৎ এর পরিপন্থী শিশু রা। ফুসফুস আক্রান্ত, বুদ্ধি মত্তl হ্রাস, মাথা ও পেট ফুলে যাওয়া, অল্প বয়সে চুল ঝরে যাও য়া, অকাল চুল পেকে যাবার মতো মরণ ব্যাধি জীবন কে গ্রাস করে। দুরবি সহ হয়ে ওঠে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন।
আবার বর্তমান এ অত্যাধুনিক যুগে চাষ বাস এর সুবিধার্থে আমরা বিষাক্ত কীট নাশক ব্যবহার করছি তা জল দূষণের অন্যতম কারণ।
বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান এ আমরা আতস বাজী ব্যবহার করি, বিশেষ করে শব্দ বাজী। শব্দ বাজী কোনো হাসপাতাল, লোকালয়, এ ফাটানো উচিৎ নয়। শব্দ দূষণ হল কোনো প্রাণীর শ্রুতি সীমা অতিক্রম কারি শক্তি। 45 প্রাণী কুল ঘুমাতে পারে না, 85 ডেসিবেল কোনো শব্দ সৃষ্টির কারণে শ্রবণ শক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।120 তে কানে ব্যথা শুরু হয় তাতে পর্দা ও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই বছর কলকাতা র মাননীয় হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন শব্দ বাজী ফাটানোর ক্ষেত্রে, নির্ধারিত সময় রাত্রি আট টার পর আর শব্দ বাজী ফাটানো যাবে না কিন্তু আমরা আমাদের লক্ষে অবিচল। মাতাল না শুনে ধর্মের বাণী। আমরা একবার ও ভাবিনি সেই সব মুমুর্শ রোগীদের কথা, যারা প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হাসপাতালে র বেডে নয় তো আপন কক্ষে, ভাবিনি স্কুল, কলেজ এর ভবিষ্যত গামী ছাত্র, ছাত্রী দের কথা, তার উপর বাজীর বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে উন্মুক্ত বাতাসে যাতে আছে জীবন বাঁচার রসদ।
য্ত্র তত্র কারণ আকারনে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ করা হোক। মাইক এর তীব্র স্বর কারো প্রাণ হানির কারণ হতে পারে। উৎসবের মজা নিতে গিয়ে এমনে ভাবে মাইক ব্যবহার করতে হবে যেনো অন্য এর ক্ষতি না হয়। তাছাড়া গাড়ির হর্ন, হাইড্রোলিক ভেপু, মাইক্রোফোন, শ্রুতি বাদক যন্ত্র এর আওয়াজ এ ক্ষয় ক্ষতি হচ্ছে শিশু, নর, নারীর কান কল কারখানা শব্দ, চিৎকার স্বর, বেতার, টেলিভিশন, ক্যাসেট ও প্লেয়ার এ নষ্ট হয়ে যায় শ্রবন ক্ষমতা। উচ্চ শব্দ জনিত শব্দ তে জন মানষ মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতায় ভুগতে থাকে। তার ফলে ঠিক মতো ঘুম হয় না, এ থেকে সৃষ্টি হয় উচ্চ রক্ত চাপ, উচ্চ হৃদ স্পন্দন, মাথা ব্যথা, বদ হজম ও পেপটিক আলসার হতে পারে। উৎসবের রঙে বিলীন হয় সুখ শান্তি এমনি মৃত্যু ও ঘটে যেতে পারি যদি সজাগ বা সচেতন না হই। এদেশ তো আজ কাল আবার নতুন এক উৎসব জমকালো হয়ে বসে আছে তা হলো ধর্ষণ। খোলা আকাশের নিচে শৌচ, যেখানে সেখানে পান, গুটখার পিক ফেলে বদলে দেয় সৌন্দর্য এর মানচিত্র। আমরা সবাই কেমন মেতে উঠেছি দূষণ দূষণ খেলায়, অচিরেই বয়ে আনছি মৃত্যুর পরোয়ানা তা কি কেউ ভেবে দেখেছি? জানিনা এর শেষ কোথায়। আমরা নিজেরাই যদি সচেতন না হই তবে এ পৃথিবী যে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।