ঋতুরাণীর হোলি খেলা

মানবেশ মিদ্দার, প্যামড়া, পূর্ব বর্ধমান

ঋতুরাজের ঘরের দোরে হঠাৎ করে নাড়লো কড়া।

কে গো এলে সাত সকালে, চুপ কেনো গো, দাওনা সাড়া।

আঁধার এখন কাটেনি যে, কে গো এলে শেষ প্রহরে?

এমন জোরে নাড়লে কড়া ভয় লাগে গো ঘুমের ঘোরে।

 

চুপি চুপি মেঘ জমেছে ঋতুরাজের  ঘরের দোরে।

ঋতুর রাণী হঠাৎ করে আজ এসেছে রাজার ঘরে।

এক দিনও সে পায়নি সুযোগ, শাওন রাণীর ভীষণ বিরাগ,

ঋতু রাজের দোল হোলিতে একদিনও সে পাইনি সোহাগ।

তাইতো মিঠি বৃষ্টি রাণী মেঘ সাজিয়ে পেতেছে ফাঁদ,

মেঘ উড়িয়ে ঘরের দোরে, নিভিয়ে দিয়ে ফাল্গুনী চাঁদ।

একটি বার খুললে দুয়ার ধরবে চেপে বসন্তকে,

ঋতু রাজের রঙ ধোয়াবে চেপ্পে ধরে জলের বুকে।

চোখের জলে ভাসিয়ে দেবে ফুল পাপড়ি আবীর পরাগ।

গায়ের জোরে বর্ষা-রাণী মাখবে গায়ে রাজার সোহাগ।

বসন্ত কি এসব জানে! ভাবলো বুঝি বৈশাখী ঝড়,

রাগ হয়েছে হঠাৎ করে ভাঙবে বুঝি রাজবাড়ি ঘর!

ভয় পেয়ে তাই বসন্তরাজ হাজার ফুলের পাপড়ি নিলো,

লাখো ফুলের আবীর পরাগ ফুলে পাতায় ছড়িয়ে দিলো।

গরম রাগী বোশেখ মেয়ের ভাঙাবে রাগ রেণু খেলে।

ছড়িয়ে দেবে পলাশ পারুল রাগী মেয়ের মুখে চুলে।

 

বর্ষারাণী দুয়ার ঘেঁষে ফুঁসছে ভীষণ অভিমানে,

হাজার সঙের রঙের নেশা ভাসাবে আজ জলের বনে।

মহুল নেশায় জল ঢালবে, তড়িৎ হেসে ছোঁয়াবে দাঁত,

মেঘলা অলোক বৃষ্টি-ঝলক, রাজার বুকে ঝর্ণা প্রপাত।

বোশেখ ভেবে যেই খুলেছে ঋতুরাজা কপাট দুয়ার,

বসন্ত রাজ ডুবে গেলো বয়ে গেলো বর্ষা জোয়ার।

সারা গায়ে বর্ষা রাণী মাখলো আবীর, ফুলেল হোলি,

বসন্তকে জড়িয়ে বুকে মাটির উপর কোলাকুলি।

বাদল রাণীর হৃদয় নাচে ডমরু গুরু মন্দ্র তালে,

বসন্তকে ভাসিয়ে নিয়ে বর্ষা চলে সাগর জলে।

বৃষ্টি রাণীর মান ভেঙেছে বসন্তকে হারিয়ে দিয়ে,

ফিরাবে আবার রাজ-ঋতুকে নতুন করে রঙ মাখিয়ে।

মুকুট আবার রাজার মাথায় রঙ-ঝিলিকে টাটকা ফুলে,

তুলির টানে ফুটবে গোলাপ বৃষ্টি জলে আবীর গুলে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 2 =