জল ও জীবন
চিত্রা দাশগুপ্ত #
জল হলো স্বাদহীন,বর্ণহীন,গন্ধহীন,স্বচ্ছ একটি অজৈব রাসায়নিক তরল পদার্থ। পৃথিবীর যে কোন উদ্ভিদ-কোষ বা জীব-কোষের প্রধান উপাদান। জল ছাড়া কোন প্রাণী বা উদ্ভিদ বাঁচতে পারে না তাই মহাকাশে ভিন্ন-গ্রহের অভিযানে বিজ্ঞানীরা সর্বদা প্রথমেই জলের অস্তিত্ব খোঁজেন।
জলের রাসায়নিক সংকেত হলো H2O।
পৃথিবীর তিনভাগ জল একভাগ স্থল। অথচ একভাগ স্থলে যতটা পরিমান জল দরকার ঠিক ততটা বিশুদ্ধ জল আজ উপলব্ধ নয়। কিছু
বিজ্ঞানী-পর্যবেক্ষকের অনুমান পৃথিবীর অর্ধেকের বেশী জনসংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে প্রচণ্ড জল সংকটের মধ্যে পড়বে।জল সাধারণত আমরা মহাসমুদ্র থেকে,বৃষ্টি ,পাহাড়ী-ঝর্ণা ,জল-প্রপাত, বরফ,নদী,হ্রদ,খাল-বিল এবং ভূগর্ভ থেকে পাই। জলের তিনটি রূপ ।জল গরমে বায়বীয় রূপ ধারণ করে বায়ূমণ্ডলে মিশে ওপরে উঠে মেঘের আকার নেয় ,শীতল বাতাসের স্পর্শে মেঘ জল-কণায় রূপান্তরিত হয়ে বৃষ্টি হয়ে ঝরেপড়ে,আবার বৃষ্টি-ফোঁটা ঠাণ্ডায় জমে কঠিন বরফ হয়ে যখন নিচে ঝরেপড়ে তাকে বলা হয় তুষার-পাত।
পৃথিবীর মাত্র ২.৫ % জল সুপেয়। প্রতিটি প্রাণীর জীবন ধারনের জন্য ও চাষবাসের জন্য যতটা নুন্যতম জল প্রয়োজন প্রতি গৃষ্মে তার অভাবে বহু অর্থ ও প্রাণহানি হয়।যথস্ট পরিমান বৃষ্টি না হলে সারা বিশ্বের বহুদেশে জলাভাব একটা কঠিন সমস্য হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশে অনেক গ্রাম আছে যেখানে জলের জন্য মহিলাদের রোজ মাইলের পর মাইল পায়েহেটে খাবার জল সংগ্রহ করতে হয়ে। চাষের জমি গরমে জলের অভাবে ফুটিফাটা হয়ে সব শস্য শুখিয়ে যায় তর ফলে বহু কৃষককে সপরিবারে অনাহারে দিন কাটাতে হয়।পানিয় জলের ভাবে বহু বন্য পশু-পাখির মৃত্যু হয়। জলাভাবে ভয়ঙ্কর দাবানলের কথা ও অজানা নয়।
ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকে আমরণ আমাদের জলের দরকার।খাদ্য ছাড়া কটা দিন বাঁচলে ও জল ছড়া বাঁচা যায় না।
একটি সুস্থ লোকের প্রতি দিন দু লিটার শুদ্ধ-জল পান করা উচিৎ কিন্তু
প্রতি বছর আমাদের দেশে বহু-লোক অস্বাস্থ্যকর জল পান করে আন্ত্রিক
ও নানা রকম কঠিন রোগের শিকার হয় ,অনেক ক্ষেত্রে প্রানহানী ও ঘটে। নিজেকে ও পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার প্রধান উপাদান জল।
কোন দেশের সর্বতোভাবে উন্নতির পিছনে ও জলের অনেক অবদান আছে।
এই জলের বন্টন নিয়ে অনেক সময় দুটিরাজ্যের মধ্যে কুট-নৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরে।খাল-বিল ভরাট করে বাড়িঘর সড়ক বানিয়ে ফাঁকা জমি কংক্রিটে করে ক্যাচমেন্ট এরিয়া সব ঢেকে ফলা হচ্ছে, ফলে বৃষ্টির জল ভূগর্ভে পৌঁছে জমা হতে পারছে না। তার জন্য জলাভাব পূর্ণ হয়না।
বর্ষার জল জমা হয়ে বানভাসি হয়। জলস্ফিতি ,জলচ্ছাস,ও বন্যার জলের
অপরিসীম শক্তি শহরের পর শহর গ্রাম মানুষ ও পশু সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। দেশের প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতি ও প্রাণ-নাশ হয়।
পরিবেশের সমতা রক্ষা করলে এই সমস্যা অংশিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। জলাভাব থেকে রক্ষা পেতে হলে জল অপচয় বন্ধকরে ,জলের সঠিক বন্টন ও রেন-ওয়াটার হারভেষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করলে মানুষ সুন্দর পৃথিবীতে স্বচ্ছন্দে সুস্থ-ভাবে বাঁচতে পারবে।