ডায়াবেটিস নিয়ে কিছু ভুল ধারণা
ডায়াবেটিস বিষয়ে আমাদের অনেকের মাঝে নানা ধরনের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অথচ ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে ডায়াবেটিস নেই এমন ব্যক্তির জীবনযাপন প্রণালির কিছু বিধিনিষেধ ছাড়া মূলত তেমন কোনো পার্থক্য নেই। এবার দেখা যাক কী ধরনের ভ্রান্ত বা অস্পষ্ট ধারণা রয়েছে আমাদের অনেকের মধ্যে।
কেউ কেউ ভাবেন, ডায়াবেটিস একটি ছোঁয়াচে রোগ। অথচ এমন ধারণা ভুল। এটি ছোঁয়াচে রোগ নয়।
কেউবা মনে করেন, মিষ্টি খেলে বা টেনশন করলে ডায়াবেটিস হয়। এ ধারণাও সঠিক নয়। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর মিষ্টি বা গ্লুকোজ সমৃদ্ধ খাবার খেলে ইনসুলিনের অভাবে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে শরীর আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
অনেক সময় চিকিৎসক বলতে পারেন, ‘আপনার হালকা ডায়াবেটিস হয়েছে’। অথচ ‘হালকা বা মাইল্ড’ ডায়াবেটিস বলে কোনো কথা নেই। বলতে হবে, ডায়াবেটিস আছে কি নেই।
কেউ কেউ ডায়াবেটিস রোগীদের খেলাধুলা করতে বা গাড়ি চালাতে নিষেধ করেন। এটাও ভুল ধারণা। যদি তাই হয় তবে স্টিভ রেডগ্রেভ কিংবা ওয়াসিম আকরামের মতো বিখ্যাত খেলোয়াড়দের কথাই ভাবুন। তারা দু’জনেই ডায়াবেটিস রোগী। আসলে ডায়াবেটিসে খেলাধুলা করাকে বরং উৎসাহ দেওয়া উচিত। এতে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা প্রতিরোধে সহায়ক হয়।
দায়িত্বশীল হলে ও রক্ত-শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকলে গাড়ি চালাতেও কোনো বাধা নেই। তবে বিশেষ কিছু সতর্কতা নেওয়া জরুরি। কেউবা ভাবেন ডায়াবেটিসে আস্তে আস্তে চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয়ের পর খাওয়াদাওয়ার নিয়ম মানলে, নিয়মিত হাঁটলে ও ডায়াবেটিসের প্রয়োজনীয় ওষুধ খেলে কিংবা ইনসুলিন নিলে এমনটি কেন হবে? রক্তে-শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত থাকলে শুধু চোখ কেন হৃৎপিণ্ড, স্নায়ু বা নার্ভ, ত্বকসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতিসাধন হতে পারে।
কেউ কেউ দাবি করেন, হোমিওপ্যাথিক ও হার্বাল মেডিসিনে ডায়াবেটিস ভালো হয়।
কীভাবে সারবে আগে নিজেই ভাবুন। কোনো গাছের যদি বয়স হয়ে যায় কিংবা সেটার যদি সঠিক পরিচর্যা করা না হয়, তাহলে ওই গাছ থেকে কি প্রত্যাশা অনুযায়ী ফুল-ফল পাওয়া যায়? ঠিক তেমনি শরীরের যে কোনো সমস্যায় বা রোগে অগ্ন্যাশয় তথা ইনসুলিন তৈরির কাজ যদি একবার বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তাহলে সেটাও আর সারানো যায় না। অতএব হোমিওপ্যাথিক ও হার্বাল মেডিসিনে ডায়াবেটিস সারে, এমন দাবি কেউ করলে বুঝবেন- হয় তিনি মিথ্যা বলছেন কিংবা ডায়াবেটিস সম্পর্কে তার জ্ঞানের অভাব রয়েছে।
কেউবা বলেন- করলা, উচ্ছে, মেথি বা নিমপাতা খেলে ডায়াবেটিস সারে।
এমন ধারণাও ভুল। কারণ, ডায়াবেটিস সারাজীবনের একটা রোগ। একবার হয়ে গেলে কোনোভাবেই এটাকে সারানো যায় না। সঠিক নিয়ম মেনে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় মাত্র। তেতো খাদ্যের রস খেলে ডায়াবেটিস রোগে উপকার হয় এ রকম ধারণা কমবেশি প্রচলিত থাকলেও এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ নেই যে, এগুলো রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে অন্যান্য কারনে এই সবজিগুলি খাওয়া ভাল।
তবে এ কথা সত্যি- করলা, উচ্ছে, মেথি বা নিমপাতা ডায়াটারি ফাইবারযুক্ত। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, হজমে সহায়তা করতে, নানা ধরনের চর্মরোগ প্রতিরোধে বিভিন্নভাবে এসব খাবার উপকারী। মেথি রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে ভূমিকা পালন করে। কারণ, এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। তাই ডায়াবেটিস রোগী এসব তেতো খাবার মানসিক প্রশান্তি সহকারে নিয়মিতভাবে খেতে পারেন। তবে চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে নয়। কেউ কেউ দাবি করেন- স্পেশাল ডায়াবেটিক ডায়েট ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো।
এ কথাও সত্য নয়। বাজারে ‘ডায়াবেটিক’ সন্দেশ, বিস্কুট, জ্যাম, চকলেট ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যায়। এসব খাবারের গায়ে চমকপ্রদ কিছু লেখা আর চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে স্বাভাবিকভাবেই একজন ডায়াবেটিস রোগীর খেতে মন চায়। অথচ ব্রিটিশ ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ডায়াবেটিক খাবারে বাড়তি তেমন উপকার কিছু নেই। এমন খাবার পরিহার করা উচিত।