মৃতদের শহর

শহরটির বেশিরভাগ মানুষই মৃত। অর্থাৎ এখানে জীবিত মানুষের থেকে মৃত মানুষের কবর একটা বড় অংশ জুড়ে আছে। এখানে প্রায় সতেরোশোমানুষ জীবিত অবস্থায়  বসবাস করেন, সেখানে প্রায় পনেরো লক্ষ কবর এই শহরে রয়েছে। তাই এই শহরটিকে কবরখানার শহর বলা যেতেই পারে।

ক্যালিফোর্নিয়ার নীরবতার শহর হিসেবে পরিচিত কোলমা নামের এই শহরটিতে একসময় যথেষ্ট বাসিন্দা ছিল একসময়। শোনা যায় ১৮ শতকের শেষদিকে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট আইন অনুসারে যত্রতত্র মৃতদেহ সমাহিত করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সেখানে বলা ছিল, শুধু নির্দিষ্ট কবরস্থান ছাড়া আর কোথাও সমাহিত করা যাবে না। তবে তখনো সমস্যা ঘনীভূত হয়নি। পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে আরো অনেক পরে। ১৯১২-র আগস্টে সান ফ্রান্সিসকোর প্রশাসন চূড়ান্ত ঘোষণা করে, সব গোরস্থান  উচ্ছেদ করা হবে, কারণ এগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। যদিও পরে বাদবাকি গোরস্থান  উচ্ছেদ করা হলেও দুটি রয়ে যায় শহরে। রোগবালাই ছড়ানোকে এই উচ্ছেদের কারণ হিসেবে দেখানো হলেও আসল কারণ ছিল জমির ক্রমবর্ধমান মূল্য। তখন সান ফ্রান্সিসকোর গোরস্থান মালিকরা হন্যে হয়ে জায়গা খুঁজতে আরম্ভ করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। এতে গোরস্থানের জন্য জায়গা সংকট দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত এই গোরস্থান এবং মৃতদেহগুলোর নতুন ঠিকানা হয় কোলমা। আর তখন থেকেই কোলমা হয়ে ওঠে মৃতদের শহর। ১৯২৬ সালে বৃহৎ সমাধিক্ষেত্র হিসেবে গোড়াপত্তন ঘটে কোলমার।

বর্তমানে কোলমার ২.২ বর্গমাইল জায়গার ৭৩ শতাংশই গোরস্থানের জন্য বরাদ্দ। ১৭টি গোরস্থানের মধ্যে আছে ইহুদি গোরস্থান, চাইনিজ গোরস্থান, আর একটি গোরস্থান সংরক্ষিত পোষা পশুপাখিদের জন্য। গোরস্থানগুলি আবার ‘মেমোরিয়াল পার্ক’ নামেও পরিচিত। মজার একটা স্লোগান প্রচলিত আছে এখানে, ‘কোলমাতে জীবিত থাকাটাই বড় ব্যাপার!’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × two =