হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং নিয়ম

হাত পরিষ্কার রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস, যার মাধ্যমে সহজেই কমপক্ষে ২০ ধরনের অসুস্থতা থেকে বাঁচা যায়। শুধু হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যকর চর্চা ডায়রিয়ার ঝুঁকি প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দেয়। বলা হয়, সঠিক নিয়মে হাত ধোয়ার অভ্যাস একটি ভালো ভ্যাকসিনের চেয়ে বেশি কাজ করে। আমরা করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে বুঝতে পারছি যে হাত ধোয়া কীভাবে ভ্যাকসিনের কাজ করে। 

মানুষ মাঝেমধ্যেই অন্যমনস্কভাবে তাদের চোখ, নাক বা মুখে হাত দেয়। এভাবে চোখ, নাক বা মুখের মাধ্যমে হাতে থাকা জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই নিয়মিত হাত ধোয়া উচিত। যতবারই খাবার খাবে, ততবারই তার হাত ধুতে হবে। রোগ প্রতিরোধে হাত ধোয়ার ভূমিকা এখন শুধু হাসপাতালে সীমাবদ্ধ নয়, বরং স্কুল, কলেজ, রেস্তোরাঁ—সবখানেই স্বীকৃত। তাই নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময় পরপর হাত ধোয়া উচিত। 

কী ভাবে  জীবাণু  ছড়াতে পারে?

টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত না ধোয়ার কারণেই সাধারণত জীবাণু সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। হাত না ধুয়ে খাবার তৈরি বা পরিবেশন করলে হাতে থাকা জীবাণু খুব সহজেই খাবারে প্রবেশ করতে পারে। হাত থেকে জীবাণু অন্যান্য জায়গাতেও ছড়িয়ে পড়ে। যেমন সিঁড়ির রেলিং, টেবিল, খেলনা, মুঠোফোন, যা থেকে অন্য মানুষের হাতে জীবাণু ছড়ায়। সুতরাং কিছুক্ষণ পরপর হাত ধোয়া ডায়রিয়া, শ্বাসনালির সংক্রমণ, ত্বক ও চোখের সংক্রমণ থেকে আমাদের বাঁচায়। এ ছাড়া কফ, হাঁচি, কাশি থেকে জীবাণুর সংক্রমণ হয়। দূষিত কোনো কিছুর সংস্পর্শে এলেও মানুষের হাতে জীবাণু আসতে পারে। আর হাতে লেগে থাকা এই জীবাণু যদি ধুয়ে না ফেলা হয় তাহলে শুধু যিনি বাহক তিনিই নন, তাঁর সংস্পর্শে যাঁরাই আসবেন, সবাই সংক্রমিত হতে পারেন। 

কখন হাত ধোয়া উচিত 

● খাবার তৈরির আগে এবং পরে

● খাওয়ার আগে

● অসুস্থ কারও সেবা করার আগে এবং পরে

● পায়খানা–প্রস্রাবের পরে

● শিশুর ডায়াপার বদলানো বা শিশুর পায়খানা পরিষ্কারের পরে

● নাক ঝাড়া, কফ ফেলা বা হাঁচি দেওয়ার পরে

● কোনো পশুপাখি বা পশুপাখির খাবার বা পশুর বিষ্ঠা ধরার পরে

● পোষা জীবজন্তুর খাবার ধরার পরে

● আবর্জনা বা ময়লা ধরার পরে।

হাত ধোয়ায় ভুল

● ১০-১৫ সেকেন্ডের কম সময় ধোয়া

● সাবান ব্যবহার না করে শুধু জল দিয়ে হাত ধোয়া, হাত ঘষে সাবানের ফেনা না করে ধোয়া অথবা সাবান ব্যবহারের পর তা ভালোভাবে জল দিয়ে ধুয়ে না ফেলা। 

● হাতের পেছনের অংশ, আঙুলগুলোর ফাঁকের জায়গা ও নখের নিচের অংশ পরিষ্কার না করা।

● একবার ব্যবহার করা জলে পুনরায় হাত ধোয়া অথবা বাটিতে জল নিয়ে সেই জলেই একাধিক জন হাত ধোয়া। একই তোয়ালেতে সবার হাত মোছা। হাত মোছার তোয়ালে মাঝেমধ্যে পরিষ্কার না করা। 

মনে রাখবেন 

● জল বা সাবান না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যায়। তবে হাত খুব বেশি ময়লা হলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাত থেকে সব জীবাণু এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ সরাতে পারে না।

● আর এখন সাবান সহজলভ্য। তাই মাটি বা ছাই নয়, অবশ্যই সাবান ও পরিষ্কার জল দিয়ে হাত ধোয়া উচিত। হাত ধোয়ার জল ময়লা হলে চলবে না।

● তাড়াহুড়া না করে সময় নিয়ে কনুই পর্যন্ত হাত ধুতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × one =